ইসরায়েলের সমালোচনা করায় জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র


ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও প্রকাশের কারণে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রানচেস্কা আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার এ ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, আলবানেজ “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছেন”। খবর আলজাজিরা।
এর আগে তিনি গাজায় সংঘটিত গণহত্যায় ইসরায়েলকে সহায়তাকারী হিসেবে চিহ্নিত ৪৮টি বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা প্রকাশ করেন, যার মধ্যে একাধিক মার্কিন কোম্পানির নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতিবেদনের প্রকাশের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়।
ফ্রানচেস্কা আলবানেজ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে তিনি অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।
বহু বছর ধরেই ইসরায়েল ও তাদের সমর্থকরা আলবানিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে জাতিসংঘ থেকে তাঁকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে।
অবশ্য আলবানেজ এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি এখন ব্যস্ত আছেন রাষ্ট্রগুলোকে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে। আর সেটি হলো গণহত্যা বন্ধ করা এবং এর জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
তিনি আল জাজিরাকে পাঠানো এক টেক্সট বার্তায় লেখেন: “মাফিয়া স্টাইল ভয়ভীতির কৌশল নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। ব্যস্ত আছি রাষ্ট্রগুলোকে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিতে— গণহত্যা থামাও, শাস্তি দাও এবং যারা এসব কর্মকাণ্ড থেকে লাভবান হচ্ছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনো।”
এর আগে বুধবার আলবানেজ সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর ওয়ারেন্টভুক্ত ব্যক্তি হলেও ইউরোপের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারছেন, যা অগ্রহণযোগ্য।
তিনি লিখেছেন: “ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিসের নাগরিকদের জানা উচিত প্রত্যেকটি রাজনৈতিক কাজ, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে, তা শুধু এই আইনকে নয়, সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, আলবানেজ “ইহুদিবিদ্বেষী” এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির ওয়ারেন্ট ইস্যুর কোনো বৈধ ভিত্তি ছিল না। তিনি আরও দাবি করেন, আলবানেজের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন মার্কিন কোম্পানিসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছে, যারা গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে সহায়তা করেছে।
রুবিও বলেন, “আমরা এমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধকে সহ্য করব না, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে।”
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।
এদিকে ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি’ নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংকের প্রধান ন্যান্সি ওকাইল এই নিষেধাজ্ঞাকে “ভয়াবহ এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরশাসকদের মতো আচরণ করছে।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে “অত্যন্ত হতাশ”। তিনি বলেন, “বিশেষ র্যাপোর্টিয়াররা স্বাধীন বিশেষজ্ঞ। তারা কোনো সরকারকে খুশি করতে বা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য নিযুক্ত হন না বরং দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত হন।”
তিনি আরও বলেন, “আলবানিজ আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্ব, বর্ণবাদ এবং গণহত্যা নথিভুক্ত করতে কঠোর পরিশ্রম করছেন।” তিনি বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোকে আহ্বান জানান, তারা যেন আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমাতে এবং জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের স্বাধীনতা রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, গত ২১ মাসে গাজায় ইসরায়েলের মার্কিন-সমর্থিত অভিযান ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এতে কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৫৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন