পর্যাপ্ত ঘুমের পরও সারাক্ষণ ক্লান্তি লাগার কারন


দিনশেষে ক্লান্তি লাগা স্বাভাবিক বিষয়। বাড়ি ফিরে কিছুটা বিশ্রাম, নিজের যত্ন এবং ভালো ঘুম সাধারণত দিনের ক্লান্তি দূর করে দেয়। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের পরও সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করেন। এই দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ধীরে ধীরে এক অদৃশ্য শহুরে মহামারীতে রূপ নিচ্ছে, অথচ আমরা তা বুঝতেই পারছি না। মানসিক চাপ, সঠিক পুষ্টির অভাব, শারীরিক অসুস্থতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণ থাকতে পারে এর পেছনে।
শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির অন্যতম কারণ। আয়রনের ঘাটতি বা রক্তস্বল্পতার কারণে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, যা মনোযোগহীনতা এবং শারীরিক দুর্বলতা তৈরি করে। ভিটামিন বি-১২ ও ফোলেটের অভাব স্নায়ুর কার্যকারিতা ব্যাহত করে। এতে দেখা দিতে পারে ভুলে যাওয়া, ঝিঁঝিঁ ধরা বা বিষণ্ণতার মতো উপসর্গ। ভিটামিন ডি এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি ঘুমের মান নষ্ট করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এছাড়া, মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা এবং মেজাজের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবও ক্লান্তির একটি বড় কারণ হতে পারে।
অক্সিজেনের ঘাটতিও দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির একটি বড় কারণ। অপর্যাপ্ত ব্যায়াম, সারাদিন বসে কাজ করা এবং অগভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এর ফলে চিন্তাশক্তি কমে যায়, দীর্ঘমেয়াদে ক্লান্তি বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। শরীর ও মস্তিষ্ক উভয়ই দুর্বল হয়ে যায়, যা কাজের ক্ষমতাও হ্রাস করে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং ডিজিটাল ওভারলোড মস্তিষ্ককে ‘সার্ভাইভাল মোড’-এ ঠেলে দেয়। অতিরিক্ত কাজের চাপ, অনিয়মিত খাবার, রাত জেগে স্ক্রিনে সময় কাটানো এবং সামাজিক মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
শরীরে দীর্ঘদিন ধরে চলা নিম্নমাত্রার সংক্রমণ বা প্রদাহ ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে ফেলে। এতে শক্তি দ্রুত ক্ষয় হয় এবং ভিটামিন সি, জিঙ্ক ও প্রোটিনের মতো জরুরি পুষ্টি উপাদান কমে যায়। ফলে ঘুমের মান খারাপ হয় এবং একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়, যেখানে ক্লান্তি আরও বেড়ে যায়।
হরমোনাল ভারসাম্যহীনতাও দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির একটি বড় কারণ। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, কর্টিসল হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের মতো সমস্যাগুলো ক্লান্তি তৈরি করতে পারে। এর সাথে ওজনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, মেজাজ খারাপ, এমনকি স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
জীবনধারাজনিত কারণ যেমন দীর্ঘদিনের ঘুমের ঘাটতি, অস্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি না পান করা এবং নেশাজাতীয় পদার্থের ব্যবহারও শরীরের এনার্জি দ্রুত কমিয়ে দেয়। প্রতিদিনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন এনে, যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করে অনেকটাই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন