ট্রফিতে শচীনের মতো কিংবদন্তির পাশে নিজের নাম দেখে নিজেই হতবাক অ্যান্ডারসন


ইংল্যান্ডে ভারতীয় দলের সফরের সময় পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ছিল ‘ম্যাক পতৌদি ট্রফি’ নামে। দুই দেশেরই সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার—ইফতিখার আলী পতৌদি ও তাঁর পুত্র মনসুর আলী খান পতৌদির প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০০৭ সালে এই ট্রফির সূচনা করা হয়েছিল। তবে সময়ের ধারায় সেই পরিচিত নামটি বদলে গেছে। ২০২৫ সালের এই সিরিজ থেকেই ট্রফির নতুন নামকরণ করা হয়েছে—‘অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি’।
সিরিজ শুরুর একদিন আগে, ১৯ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে এই নতুন ট্রফির উন্মোচন করা হয়। দুই মহাতারকা—ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন ও ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার একসাথে ট্রফির মোড়ক উন্মোচন করেন। ক্রিকেট ইতিহাসে দুই ভিন্ন যুগের প্রতিনিধিত্বকারী এই দুই কিংবদন্তির নামেই এবার থেকে ভারত-ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী টেস্ট সিরিজটি অনুষ্ঠিত হবে।
এখন পর্যন্ত সিরিজের তিনটি ম্যাচ শেষ হয়েছে। প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ড জয় পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে এজবাস্টনে ভারতের কাছে হেরে যায়। এরপর লর্ডসে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আবারও সিরিজে এগিয়ে যায় ইংলিশরা। আগামী ২৩ জুলাই, বুধবার শুরু হবে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ। সিরিজ এখন উত্তেজনার চূড়ায় অবস্থান করছে।
ট্রফির নতুন নামকরণ নিয়ে নিজেই কিছুটা বিস্মিত জেমস অ্যান্ডারসন। কিংবদন্তি শচীনের সঙ্গে নিজের নাম একসাথে ব্যবহার দেখে আবেগাপ্লুত তিনি। স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যান্ডারসন বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি আমার নাম এমন একজনের পাশে থাকবে যাকে আমি সব সময় শ্রদ্ধা করে এসেছি। শচীন এত বড় একজন তারকা, তার সঙ্গে একসাথে ট্রফির নাম জুড়ে দেওয়া সত্যিই গর্বের, কিন্তু একইসঙ্গে নিজেকে নিয়ে একটু সংশয়ে পড়ি। আমি হয়তো তার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্য নই।’
ক্রিকেট ইতিহাসে অ্যান্ডারসনের অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলে তিনি উইকেট নিয়েছেন ৭০০-এর বেশি, যা একজন ফাস্ট বোলারের জন্য একটি অনন্য রেকর্ড। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র পেসার হিসেবে এই মাইলফলকে পৌঁছেছেন তিনি। তবে নিজেকে নিয়ে অহংকার নেই অ্যান্ডারসনের। বরং তার অর্জন নিয়েও মাঝে মাঝে বিস্মিত হন তিনি।
তার ভাষায়, ‘যখন কেউ আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলে কিংবা আমি কী অর্জন করেছি সেটা উল্লেখ করে, তখন নিজের কাছেই অবাক লাগে। মনে হয়, সত্যিই কি আমি এসব করেছি? বিষয়গুলো অনেক সময় স্বপ্নের মতো মনে হয়।’
২০২৪ সালের জুলাইয়ে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন অ্যান্ডারসন। সেই বিদায়ী ম্যাচে ৪ উইকেট শিকার করেন তিনি। ইংল্যান্ড সেই ম্যাচে জয় পায় ১১৪ রানের ব্যবধানে। বিশেষ এক আবেগঘন মুহূর্তে নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই কিংবদন্তি। তার টেস্ট অভিষেকও ছিল বেশ নাটকীয়—২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেই ৫ উইকেট নিয়ে জানান দেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনার।
অন্যদিকে, শচীন টেন্ডুলকারের কথা বললে তা যেন ক্রিকেট ইতিহাসের এক মহাকাব্য। সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার আন্তর্জাতিক রান করে তিনিই এখনও রানের রাজা। ক্রিকেট বিশ্বে শচীনের অবদান, প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা এতটাই গভীর যে, ট্রফিতে তাঁর নাম থাকা এক অর্থে দুই দেশের ক্রিকেট ঐতিহ্যেরই প্রতিচ্ছবি।
টেস্ট ক্রিকেটে ভারত ও ইংল্যান্ডের দ্বৈরথ বহুদিনের। এই সিরিজের প্রতিটি ম্যাচে থাকে ঐতিহ্য, সম্মান, প্রতিযোগিতা আর আবেগ। এবার সেই দ্বৈরথে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা—দুই কিংবদন্তির নামে উৎসর্গকৃত এক ঐতিহাসিক ট্রফি, যা ক্রিকেটের ইতিহাসে যুগান্তকারী স্মারক হয়ে থাকবে।
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন