চবি শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী বিতর্কে, আরএসএস ও যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশঃ ৫ জুলাই ২০২৫, ৫:৪০ পিএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক ও ছাত্রবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, তিনি ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে আসছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যও দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতি বোর্ডে তার নাম উঠতেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যোগী আদিত্যনাথ ও আরএসএস নেতাদের সঙ্গে তোলা একাধিক ছবি। এমনকি তাকে আরএসএসের অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের পাশে ছবি তুলতেও দেখা গেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।
আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘গণহত্যা’র অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র ও সংশ্লিষ্ট ছাত্রনেতাদের দাবি, কুশল বরণ চক্রবর্তী একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা চলছে’—এমন বক্তব্য দিয়েছেন। একইসঙ্গে ঢাকায় আয়োজিত কিছু সনাতন মিছিল-সমাবেশে তিনি ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘হিন্দু রাষ্ট্র চাই’ জাতীয় উগ্র স্লোগান দিয়েছেন বলেও অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা তাহসান হাবিব আমার দেশকে বলেন, “কুশল বরণ একাধিক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।”
ক্যাম্পাসে উত্তেজনা, উপাচার্যের দপ্তরে আশ্রয়
গত বৃহস্পতিবার চবি প্রশাসনিক ভবনে সহযোগী অধ্যাপক পদে সাক্ষাৎকার দিতে গেলে শিক্ষার্থীদের একাংশ তাকে ঘিরে প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কুশল বরণ চক্রবর্তীকে উপাচার্যের দপ্তরে আশ্রয় নিতে হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর উপাচার্যের গাড়িতে করে তিনি স্থান ত্যাগ করেন।
কুশলের বক্তব্য: "অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন"
অভিযোগ অস্বীকার করে ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন, “আমাকে পরিকল্পিতভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। আমি নিয়ম মেনেই সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েছিলাম, সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে।”
মামলা ও অতীত বিতর্ক
২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের এক কর্মীর দায়ের করা মামলায় কুশল বরণ ২০ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত হন। একই বছরের ২৬ অক্টোবর সংখ্যালঘুদের ওপর ‘গণহত্যা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করে তিনি চরম বিতর্কের মুখে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আহমাদ ইফতেখার বলেন, “কুশল স্যার নিয়মিত ধর্মবিদ্বেষমূলক পোস্ট দেন। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পদোন্নতি বোর্ড বাতিল
শুক্রবার বিকেল ৩টায় কুশলের পদোন্নতির জন্য বোর্ড বসার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। স্লোগান দেওয়া হয়— “ভিসি চমৎকার, স্বৈরাচারের পাহারাদার”।
প্রশ্ন উঠছে যোগ্যতা নিয়েও
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক দাবি করেন, ড. কুশল বরণ যেসব গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন তা তার একাডেমিক ডিসিপ্লিনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নিয়ম অনুযায়ী, গবেষণা ও প্রকাশনার মান ও বিষয়গত মিল থাকা জরুরি হলেও কুশল সেই মানদণ্ড পূরণ করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সূত্র: আমার দেশ পত্রিকা
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন