KOFIPOST

KOFIPOST

হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে উত্তাল মহারাষ্ট্র, ভারতে ভাষা নিয়ে উত্তেজনা

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশঃ ১২ জুলাই, ২০২৫, ১২:৪৮ এএম

অ+
অ-
হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগে উত্তাল মহারাষ্ট্র, ভারতে ভাষা নিয়ে উত্তেজনা
হিন্দি ভাষার বিরোধিতা করে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে এক নারীকে আটক করছে ভারতীয় পুলিশ | ছবি: বিবিসি

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা চলছে, যা এখন রূপ নিয়েছে সহিংসতায়। চলতি বছরের এপ্রিলে রাজ্যের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তই এই উত্তেজনার সূত্রপাত। এর আগে এসব বিদ্যালয়ে কেবল মারাঠি ও ইংরেজি পড়ানো হতো।


ভারত সরকার বলছে, এই সিদ্ধান্ত জাতীয় শিক্ষানীতির (এনইপি) নির্দেশনা অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। এনইপির আওতায় তিনটি ভাষা শেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।


বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে মহারাষ্ট্রের সুশীল সমাজ ও বিরোধী নেতারা। সেখানে ইতিমধ্যে ভাষা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকার জোর করে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিচ্ছে।


ভারতে ভাষা বরাবরই অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ইস্যু। স্বাধীনতার পর বহু রাজ্য ভাষাভিত্তিক বিভাজনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও আত্মমর্যাদা স্থানীয় ভাষার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাই হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপকে অনেকেই তাদের পরিচয়ের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।


বিশেষ করে হিন্দি ভাষা নিয়ে আপত্তি সবচেয়ে বেশি। কারণ এটি মূলত উত্তর ও মধ্য ভারতের ভাষা। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দি প্রসারের প্রয়াস দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় জনগণ মনে করছেন, এতে তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। তদুপরি, উন্নত রাজ্যগুলোতে হিন্দিভাষী রাজ্য থেকে ব্যাপক অভিবাসন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।


২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর ভাষানির্ভর রাজনীতির উত্তেজনা বাড়তে থাকে। শীর্ষ বিজেপি নেতারা প্রায়ই হিন্দিকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন, যা বিতর্ক সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তখন মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে এবং বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। যদিও বিরোধ তাতে থামে না।


এই টানাপোড়েনের মাঝেই মহারাষ্ট্রে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের সবচেয়ে ধনী নগর সংস্থা মুম্বাই পৌরসভা। ফলে রাজনৈতিক উত্তাপও চরমে পৌঁছেছে। শাসক ও বিরোধী পক্ষ একে অপরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দোষারোপ করছে।


তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, ভাষা নিয়ে সহিংস ঘটনাও ঘটছে। এপ্রিল মাসে মহারাষ্ট্রের থানে জেলায় দুই নারীকে শুধু ইংরেজিতে কথা বলার কারণে আক্রমণ করা হয়। একই সময় মুম্বাইয়ে এক নিরাপত্তারক্ষী মারাঠি জানেন না বলে মারধরের শিকার হন। মে মাসে এক দম্পতি মারাঠিতে কথা না বলায় ডেলিভারি কর্মীকে পারিশ্রমিক দেননি। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মারাঠি না বলায় এক দোকানদারকে মারধর করা হচ্ছে।


বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভাষাভিত্তিক আবেগ আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে অনেকে মনে করেন, এ ধরনের বিভাজনমূলক রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদে জনগণের আস্থা হারাবে।

ট্যাগস:

ভারতমহারাষ্ট্রভাষাবিজেপি

কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।

© কফিপোস্ট ডট কম

অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন