‘অদৃশ্য শত্রু’ এখন দৃশ্যমান, দলের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযানের কঠোর বার্তা দিলেন তারেক রহমান


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তিনি প্রায় সাত-আট মাস আগে যে ‘অদৃশ্য শত্রুর’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, তা এখন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে এবং সেই শত্রুরা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং ভবিষ্যৎ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় তারেক রহমান অভ্যন্তরীণ ঐক্য সুদৃঢ় করার পাশাপাশি দলের মধ্যে যারা জনসমর্থনহীন বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হলে এবং দলে শুদ্ধি অভিযান না চালালে গত ১৫ বছরের ত্যাগ ও নির্যাতন বৃথা হয়ে যাবে।
অদৃশ্য শক্তি’ বনাম ভবিষ্যৎ লড়াই
তারেক রহমান তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে নেতাকর্মীদের তার পূর্ববর্তী সতর্কবার্তার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি উল্লেখ করেন, বেশ কয়েক মাস আগেই তিনি দলকে একটি ভিন্ন মাত্রার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি আজকে থেকে সাত মাস আট মাস আগে বলেছিলাম আপনাদেরকে, নিশ্চয়ই অনেকেই সেই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। আমাদেরকে অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। বুঝেছেন কেন আট মাস আগে আমি কথাটি বলেছিলাম আর সেটি প্রমাণিত হচ্ছে সত্য।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্ট করেন যে, এতদিন যে শক্তি বা প্রতিপক্ষ আড়ালে থেকে কাজ করছিল, তারা এখন সামনে আসছে। তার ভাষায়, “সেই অদৃশ্য অনেক শক্তি কিন্তু অদৃশ্য অনেক শত্রু বা প্রতিপক্ষ কিন্তু আজ আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে।” যদিও তিনি এই ‘দৃশ্যমান শত্রু’ কারা তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বর্তমান সরকার এবং তাদের সহযোগী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শক্তিকে ইঙ্গিত করেই বলা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান ও ঐক্যের ডাক
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন তারেক রহমান। তিনি কোনো রাখঢাক না রেখেই দলের ভেতরে থাকা বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
তিনি নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, “আমরা যদি আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ না করি, আমাদের ভিতরে কেউ যদি কিছু কিছু কাজ করে থাকে যেগুলো জনসমর্থনযোগ্য নয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদেরকে সরিয়ে দিতে হবে, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না।”
তারেক রহমানের এই বক্তব্যকে দলের চেইন অব কমান্ড শক্তিশালী করা এবং বিভিন্ন স্তরে সুবিধাবাদী বা আদর্শচ্যুত নেতাদের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট শুদ্ধি অভিযানের বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
৩১ দফা বাস্তবায়ন ও ১৫ বছরের ত্যাগ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নকে নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন যে, অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং বিশৃঙ্খলা এই লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে।
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমরা যদি এই কাজগুলো (ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও শুদ্ধি অভিযান) না করি, তাহলে আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হয়তো পারবো না।
নেতাকর্মীদের আবেগ এবং ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, “আর যদি ৩১ দফা বাস্তবায়ন না করি, তাহলে গত ১৫ বছর ধরে আপনারা যে ত্যাগ করেছেন, যে অত্যাচার, নির্যাতন, কষ্ট সহ্য করেছেন—সকল কিছু বৃথা হয়ে যাবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল স্তরের নেতাকর্মীকে দলের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তিগত বিভেদ ভুলে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
তারেক রহমানের এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিএনপি যখন সরকারবিরোধী আন্দোলনকে নতুন ধাপে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দলের সর্বোচ্চ নেতার এই কঠোর বার্তা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
‘অদৃশ্য শত্রু দৃশ্যমান’ হওয়ার মন্তব্যটি বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিল সমীকরণের ইঙ্গিত বহন করে। পাশাপাশি, দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী, গতিশীল এবং জনমুখী করার একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা হিসেবে এই বক্তব্যকে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এই বার্তা দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে এবং ভবিষ্যৎ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের নতুন করে উজ্জীবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন