ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ শেষ করতে পারে, তবে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সুযোগ নেই: ট্রাম্প


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চাইলে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ এখনই শেষ করতে পারে। তবে শর্ত হলো, ইউক্রেন আর ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দিতে পারবে না। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্প আরও স্পষ্ট করে বলেন, ২০১৪ সালে রাশিয়া যে ক্রিমিয়া দখল করেছিল, সেটি ফেরত পাওয়া যাবে না।
এর আগে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি যুদ্ধবিরতির বদলে স্থায়ী শান্তিচুক্তির প্রস্তাব দেন। এই বৈঠকের পরই ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানালেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ শেষ করতে পারে। তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেন,
“ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এখনই শেষ করতে পারেন, অথবা লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখবেন কিভাবে এটা শুরু হয়েছিল। ক্রিমিয়া আর ফেরত পাওয়া যাবে না, আর ইউক্রেনের ন্যাটোতে প্রবেশও নয়। কিছু বিষয় কখনো বদলায় না।”
সোমবার ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে বৈঠকে জেলেনস্কির সঙ্গে যোগ দেবেন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন।
এ নিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, “আগামীকাল হোয়াইট হাউসে বড় দিন। এত ইউরোপীয় নেতাকে একসঙ্গে কখনো পাইনি। তাঁদের আতিথ্য দেওয়াটা আমার জন্য সম্মানের।”
জেলেনস্কিও সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, “আমরা সবাই চাই দ্রুত ও স্থায়ীভাবে এই যুদ্ধের অবসান হোক।” তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ১৯৯৪ সালের মতো অবাস্তব নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নয়, কার্যকর গ্যারান্টি প্রয়োজন।
ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে ট্রাম্প চাপ সৃষ্টি করতে পারেন বলে ইউরোপীয় দেশগুলোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, “জেলেনস্কিকে জোর করে কোনো চুক্তিতে রাজি করানোর ধারণা নিছকই গণমাধ্যমের বানোয়াট গল্প।”
ইতিপূর্বে ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক তর্কাতর্কিতে ভেঙে যাওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর ইউরোপীয় নেতারা সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জুলাইয়ে ট্রাম্প-জেলেনস্কির মধ্যে ফোনালাপকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট “সবচেয়ে ভালো আলোচনা” হিসেবে আখ্যা দেন। অন্যদিকে ট্রাম্প রাশিয়ার লাগাতার আগ্রাসনে বিরক্তি প্রকাশ করে পুতিনকে “পুরোপুরি পাগল” বলে অভিহিত করেন। এদিকে, রাশিয়ার সেনারা এখনো ইউক্রেনের প্রায় পাঁচভাগের একভাগ এলাকা দখল করে রেখেছে।
রবিবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে ইউক্রেন, ন্যাটো ও ইউরোপীয় নেতারা একসঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ জানান, পুতিন ন্যাটোর আর্টিকেল ৫-এর মতো শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় সম্মত হয়েছেন, যা ইউক্রেনের জন্য “গেম-চেঞ্জার” হতে পারে।
তবে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, এ বিষয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এখনো যুদ্ধ শেষ হওয়ার মতো কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। তার ভাষায়, “আমরা এখনো অনেক দূরে আছি।”
সোর্সঃ বিবিসি
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন