তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
ই-মেইল কি? ই-মেইল এর জনক কে ও সুবিধা গুলো কি কি

মোঃ মাসুদ রানা
প্রকাশঃ ৪ জুলাই ২০২৫, ১০:২৪ এএম

ডিজিটাল যুগে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো ই-মেইল। এর পূর্ণরূপ হলো ‘ইলেকট্রনিক মেইল’ (Electronic Mail)। সহজ কথায়, ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুটি ডিজিটাল ডিভাইসের (যেমন: কম্পিউটার, স্মার্টফোন) মধ্যে বার্তা বা তথ্য আদান-প্রদান করার পদ্ধতিকেই ই-মেইল বলা হয়। এটি সনাতন ডাক (পুরনো দিনের ডাক ব্যবস্থা) ব্যবস্থার একটি ডিজিটাল সংস্করণ, যা মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে তথ্য পৌঁছে দিতে পারে।
ই-মেইল কীভাবে কাজ করে?
চিঠি পাঠানোর জন্য যেমন প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা প্রয়োজন, তেমনি ই-মেইলের জন্যও একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা বা ‘ই-মেইল অ্যাড্রেস’ লাগে। প্রতিটি ব্যবহারকারীর ই-মেইল অ্যাড্রেস ইউনিক বা স্বতন্ত্র হয়। নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট একটি গোপন পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।
একটি ই-মেইল অ্যাড্রেসের প্রধান দুটি অংশ থাকে, যা ‘@’ চিহ্ন দ্বারা বিভক্ত:
- ব্যবহারকারীর নাম (Username): এটি ব্যবহারকারীর পরিচয় বহন করে। যেমন: example_user
- ডোমেইন নেম (Domain Name): এটি ই-মেইল পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচয়। যেমন: gmail.com
সুতরাং, একটি পূর্ণাঙ্গ ই-মেইল অ্যাড্রেস দেখতে example_user@gmail.com-এর মতো হয়। যখন কেউ একটি ই-মেইল পাঠায়, বার্তাটি ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) ব্যবহার করে প্রেরকের সার্ভার থেকে প্রাপকের সার্ভারে জমা হয় এবং প্রাপক ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে তা গ্রহণ করেন।
একটি ই-মেইলের গঠন
সাধারণত একটি ই-মেইল বার্তা তিনটি অংশে বিভক্ত থাকে:
- বার্তার খাম (Envelope): এটি ই-মেইল প্রেরণের কারিগরি তথ্য বহন করে, যা সাধারণ ব্যবহারকারীরা দেখতে পান না।
- হেডার (Header): এতে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানা, বার্তার বিষয় (Subject) এবং পাঠানোর সময় উল্লেখ থাকে।
- মূল বার্তা (Body): এটি ই-মেইলের মূল অংশ, যেখানে টেক্সট, ছবি, লিঙ্ক বা সংযুক্ত ফাইল (Attachment) থাকে। অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে যেকোনো ডিজিটাল ফাইল, যেমন— ডকুমেন্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও পাঠানো যায়।
ই-মেইলের জনক
আমেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন (Raymond Samuel Tomlinson)-কে ই-মেইলের জনক বলা হয়। ১৯৭১ সালে তিনিই প্রথম আরপানেট (ARPANET - ইন্টারনেটের পূর্বসূরি) ব্যবহার করে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে বার্তা পাঠান এবং ই-মেইল অ্যাড্রেসে ‘@’ চিহ্নের ব্যবহার শুরু করেন। তাঁর এই উদ্ভাবন বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল যোগাযোগে বিপ্লব নিয়ে আসে।
ই-মেইল ব্যবহারের জন্য যা প্রয়োজন
- একটি ইন্টারনেট-সক্ষম ডিভাইস (কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন)।
- সক্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ।
- একটি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট, যা Gmail, Yahoo Mail, Outlook-এর মতো প্ল্যাটফর্মে খোলা যায়।
- প্রেরক এবং প্রাপকের সঠিক ই-মেইল অ্যাড্রেস।
ই-মেইলের সুবিধা
ই-মেইল আধুনিক জীবনে একটি অপরিহার্য যোগাযোগ মাধ্যম। এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো:
- দ্রুতগতি: চোখের পলকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বার্তা পাঠানো যায়।
- সাশ্রয়ী: প্রচলিত ডাক ব্যবস্থার চেয়ে এর খরচ প্রায় নেই বললেই চলে।
- সহজ ব্যবহার: ই-মেইল পাঠানো, গ্রহণ করা এবং সংরক্ষণ করা অত্যন্ত সহজ।
- তথ্য সংযুক্তি: বার্তার সাথে যেকোনো ধরনের ফাইল (ছবি, ডকুমেন্ট, ভিডিও) সংযুক্ত করে পাঠানো যায়।
- একাধিক প্রাপক: একই ই-মেইল এক বা একাধিক ব্যক্তিকে একসঙ্গে পাঠানো (CC ও BCC ব্যবহার করে) সম্ভব।
- পরিবেশবান্ধব: কাগজ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না বলে এটি পরিবেশের জন্য সহায়ক।
- প্রমাণ সংরক্ষণ: পাঠানো এবং গ্রহণ করা সমস্ত ই-মেইল রেকর্ড হিসেবে সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে, যা প্রয়োজনে খুঁজে পাওয়া যায়।
- স্বয়ংক্রিয় উত্তর: প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তর পাঠানোর (Auto-Reply) ব্যবস্থা করা যায়।
হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই ডিজিটাল ডাক ব্যবস্থাটি বর্তমানে সনাতন ডাক অর্থাৎ পুরনো দিনের ঐতিহ্যবাহী ডাক ব্যবস্থাকে প্রায় প্রতিস্থাপন করেছে এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন