KOFIPOST

KOFIPOST

কেন সরকার বিরোধী বিক্ষোভে 'ওয়ান পিস'-এর পতাকা দেখা যায়?

মোঃ মাসুদ রানা
মোঃ মাসুদ রানা

প্রকাশঃ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০৭ এএম

অ+
অ-
কেন সরকার বিরোধী বিক্ষোভে 'ওয়ান পিস'-এর পতাকা দেখা যায়?
ছবি: সংগৃহীত

আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ের আন্তর্জাতিক খবর বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখেন, তাহলে হয়তো একটি অদ্ভুত বিষয় খেয়াল করে থাকবেন। চিলি, হংকং, ফ্রান্স, নেপাল থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ার সরকারবিরোধী আন্দোলনে একটি পরিচিত পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে। এমনকি এই পতাকা বাংলাদেশের গণঅভ্যুল্থানেও উড়তে দেখা গিয়েছিলো। পতাকাটি কোনো দেশের নয়, কোনো রাজনৈতিক দলেরও নয়। এটি জাপানের বিখ্যাত অ্যানিমে সিরিজ ‘ওয়ান পিস’ এর জলদস্যুদের পতাকা, স্ট্র হ্যাট পাইরেটসদের প্রতীক। কিন্তু কেনো একটি অ্যানিমের কাল্পনিক পতাকা বাস্তব দুনিয়ার রাজনৈতিক প্রতিবাদের অংশ হয়ে উঠলো? এর পেছনের কারণটা বেশ গভীর এবং আকর্ষণীয়।


‘ওয়ান পিস’ শুধু একটি অ্যানিমে বা মাঙ্গা সিরিজ নয়, এটি একটি দীর্ঘ যাত্রার গল্প। এর কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে মাংকি ডি. লুফি এবং তার সঙ্গীরা, যারা ‘স্ট্র হ্যাট পাইরেটস’ নামে পরিচিত। তাদের স্বপ্ন হলো ‘ওয়ান পিস’ নামক গুপ্তধন খুঁজে বের করে জলদস্যুদের রাজা হওয়া। কিন্তু তাদের এই যাত্রা কেবল ধনসম্পদ খোঁজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই যাত্রাপথে তাদের বারবার লড়াই করতে হয় এক দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী বিশ্ব সরকারের (World Government) বিরুদ্ধে। এই বিশ্ব সরকার নিজেদের সুবিধার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করে, সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং স্বাধীনতার কণ্ঠরোধ করে। লুফি এবং তার দল ঠিক এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়ায়। তারা যেখানেই যায়, সেখানেই সাধারণ মানুষকে অত্যাচারী শাসকদের হাত থেকে মুক্তি দেয়। ফলে, তাদের জলদস্যু পতাকাটি কেবল অরাজকতার প্রতীক না হয়ে, মুক্তি, স্বাধীনতা এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক শক্তিশালী প্রতীকে পরিণত হয়েছে।


এই বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দেখতে পারি। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় অনেক নাগরিক তাদের বাড়ির ছাদে বা সামাজিক মাধ্যমে জাতীয় পতাকার বদলে ‘ওয়ান পিস’ এর কালো পতাকাটি ব্যবহার করে। তাদের ভাষ্যমতে, দেশের ক্ষমতাসীন সরকার এতটাই দমনমূলক আচরণ করছে যে, সেই সরকারের অধীনে জাতীয় পতাকা ওড়ানোকে তারা দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ বলে মনে করতে পারছিলেন না। এর বদলে, তারা লুফির স্ট্র হ্যাট পতাকাটিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয়। এই ঘটনাটি সরকারের জন্য এতটাই অস্বস্তিকর ছিল যে, তারা একে ‘উস্কানিমূলক’ বলে আখ্যা দেয় এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়। অথচ আন্দোলনকারীদের কাছে এটি ছিল নিজেদের মত প্রকাশের একটি শান্তিপূর্ণ উপায়, যা তারা তাদের প্রিয় একটি গল্প থেকে ধার করেছিল।


আসলে ‘ওয়ান পিস’ এর পতাকাটি তরুণ প্রজন্মের কাছে এক ধরনের সর্বজনীন ভাষা হয়ে উঠেছে। যখন প্রচলিত রাজনৈতিক প্রতীক বা স্লোগানগুলো আবেদন হারায়, তখন পপ কালচারের এমন শক্তিশালী প্রতীকগুলো মানুষকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে পারে। এই পতাকাটি দেখলেই বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্ত বুঝে যায় এর পেছনের বার্তাটি কী। এটি হলো ছোট একদল মানুষের বড় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গল্প, যা যেকোনো দেশের সাধারণ আন্দোলনকারীদের নিজেদের পরিস্থিতির সাথে মেলাতে সাহায্য করে।


এজন্য পরেরবার যখন কোনো বিক্ষোভে খড়ের টুপি পরা খুলির এই পতাকাটি দেখবেন, তখন অবাক হবেন না। জেনে রাখবেন এটি কেবল একটি কার্টুনের পতাকা নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিপাগল মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য এবং সুন্দর এক ভবিষ্যতের স্বপ্নের প্রতীক হয়ে উঠেছে।


ট্যাগস:

ওয়ান পিসসরকার বিরোধীআন্দোলন

কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।

© কফিপোস্ট ডট কম

অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন