KOFIPOST

KOFIPOST

চীনের বুকে প্রকৃতির হানা, কান্না আর হাহাকারে বিপর্যস্ত জনজীবন

মোঃ আব্দুল  আলিম
মোঃ আব্দুল আলিম

প্রকাশঃ ১৩ আগস্ট, ২০২৫, ৪:৩৯ পিএম

অ+
অ-
চীনের বুকে প্রকৃতির হানা, কান্না আর হাহাকারে বিপর্যস্ত জনজীবন

চীনের আকাশ যেন ক্রমাগত ঝরে পড়ছে। দিনের পর দিন থেমে না থাকা ভারী বৃষ্টি, তার সাথে পাহাড় ধস ও ভয়ংকর বন্যা সব মিলিয়ে দেশের কয়েকটি অঞ্চল এখন এক বিপর্যস্ত চিত্রের আবাসস্থল। সিচুয়ান, হেনান, হেবেই প্রদেশের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। একসময় যেখানে ছিল মানুষের সাজানো শহর, সবুজ গ্রাম আর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, আজ সেখানে দেখা যায় কেবল ঘোলা পানির উত্তাল ঢেউ ও ধ্বংসস্তূপ।


রাস্তাঘাট, সেতু, ঘরবাড়ি কিছুই রক্ষা পায়নি। বিশাল নদীগুলো উপচে উঠে গ্রাস করেছে আশপাশের বসতি। বহু এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। জলরাশির তীব্র স্রোত যেন মুহূর্তেই মানুষের স্বপ্ন ও আশ্রয় কেড়ে নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে, বাধ্য হয়েছে খোলা আকাশের নিচে বা অস্থায়ী ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নিতে।


বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু অঞ্চল। খাবারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে; পানির অভাবে মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে, যা নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ভাঙনের কারণে অসংখ্য মানুষ প্রিয়জনের খোঁজও পাচ্ছে না কেউ জানে না কে বেঁচে আছে আর কে নিখোঁজ।


উদ্ধারকর্মীরা প্রতিনিয়ত প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। নৌকা, হেলিকপ্টার ও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদে সরানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রাকৃতিক এই তাণ্ডবের সামনে তাদের সক্ষমতা অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ছে। অনেকে ধসে পড়া ঘরের নিচে আটকা, আবার কেউ পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেসে গেছে— এমন খবর আসছে প্রতিদিনই।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিপর্যয়ের পেছনে শুধু প্রাকৃতিক কারণই নয়, মানুষের অবহেলাও দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ, অবাধ নগরায়ণ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা এবং পরিবেশ ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ড এ ধরনের দুর্যোগকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। যদি এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতি আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে।


সরকার উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে, জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হচ্ছে, কিন্তু যারা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে—তাদের মানসিক ও আর্থিক ক্ষত সারাতে সময় লাগবে বহুদিন। অনেকেই বলছে, এই ক্ষতি শুধু বস্তুগত নয়, বরং প্রিয়জন হারানোর শোক এমন এক দাগ রেখে যাবে যা হয়তো কোনোদিনই মুছে যাবে না।


চীনের এই বিপর্যয় আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে—প্রকৃতির সামনে মানুষ আসলে কতটা অসহায়। এটি কেবল একটি দেশের দুর্ভোগ নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এক সতর্কবার্তা: পরিবেশ ও জলবায়ুকে অবহেলা করলে তার মাশুল দিতে হয় ভয়াবহভাবে।

ট্যাগস:

বৃষ্টি বন্যাপ্রাকৃতিক দুর্যোগ

কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।

© কফিপোস্ট ডট কম

অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন