স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বৃত্তিপ্রাপ্ত গাজার ছাত্রীদের ভিসা বাতিল


বছর দেড়েক আগে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকার প্রায় ২০০ ছাত্রীকে পূর্ণ বৃত্তি দেয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালিকাভুক্ত ১৮৯ জন ছাত্রীকে ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ সুবিধা অনুমোদন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা থেকে জর্ডান হয়ে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে তাদের চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কথা ছিল।
তবে গত জুনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নির্দেশে সেই ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে। লিখিত নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়নি। অপরদিকে ফিলিস্তিনের দুতাবাসও চায়না গাজার ছাত্রীরা চট্টগ্রামের এইউডব্লিউ-তে পড়ুক। এর ফলে বৃত্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র একুশে টেলিভিশনকে জানায়, ভিসা প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার মধ্যে অন্তত ৩০ ছাত্রী নিখোঁজ হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে—তাদের কেউ হয়তো ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বা অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে নতুন করে তালিকা তৈরি করে ১৭১ জনের ভিসা আবেদন জমা দিয়েছে এইউডব্লিউ। এর মধ্যে অন্তত ১৩০ জন ভর্তি হয়ে বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।
সূত্রগুলো জানায়, ফিলিস্তিনি ছাত্রীদের এইউডব্লিউ-তে পড়াশোনার বিষয়টি শুরু থেকেই একটি মহল প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে। তারা দাবি করে, গাজার ছাত্রীরা চাইলে বাংলাদেশের অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করতে পারে। এ প্রেক্ষিতে মহলটি অনানুষ্ঠানিকভাবে সরকারি পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করেছে। কূটনৈতিক সূত্রের ইঙ্গিত, ঢাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাসও এইউডব্লিউ-তে গাজার ছাত্রীরা পড়ুক, তা চায় না।
গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ফিলিস্তিন দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানায়—গাজার মেধাবী ছাত্রীরা বাংলাদেশের যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলে তারা স্বাগত জানাবে। তবে নীতি অনুযায়ী, ফিলিস্তিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার অনুমতি দেওয়া হয়; এইউডব্লিউ সেই তালিকায় নেই।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কামাল আহমেদ সম্প্রতি ফিলিস্তিন সফর করে দেশটির শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি জানান, দুই মন্ত্রী গাজার ছাত্রীদের জন্য বৃত্তি দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কামাল আহমেদ বাংলাদেশের সরকারের কাছে দ্রুত ভিসা প্রদানের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাত্রীদের বাংলাদেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রেখেছে এবং সরকারের কাছেও সমাধানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তবে ছাত্রীদের পড়াশোনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী মহলও সক্রিয় রয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন