মোদি সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে মুসলিম-খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ৬০২টি ঘৃণাজনিত হামলা ও ৩৪৫টি ঘৃণাবক্তব্য: প্রতিবেদন


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে ভারতে মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর নজিরবিহীন ঘৃণাজনিত সহিংসতা ও বক্তব্যের ৯৫০টি ঘটনার তথ্য তুলে ধরেছে সদ্য প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন।
"অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস" ও "কুইল ফাউন্ডেশন" কর্তৃক প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি ৭ জুন ২০২৪ থেকে ৭ জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময়কালের তথ্য বিশ্লেষণ করে। এর মধ্যে ৬০২টি সরাসরি ঘৃণাজনিত হামলা এবং ৩৪৫টি ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাকর্মীদের সাথে সম্পৃক্ত।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি টার্গেট হয়েছেন—৪১৯টি হামলায় ১৪৬০ মুসলিম আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ২৫ জন নিহত ও ১৭৩টি শারীরিক হামলার ঘটনা রয়েছে। খ্রিস্টানদের ওপর ৮৫টি হামলায় ১৫০৪ জন আক্রান্ত হন। শুধু ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই গির্জা ও প্রার্থনালয়ে হামলায় ২৬৭ খ্রিস্টান ক্ষতিগ্রস্ত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতো গুরুতর ঘটনা সত্ত্বেও সরকারের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেই এসব ঘৃণাজনিত অপরাধ নথিভুক্ত করার জন্য। এতে বিচার ও জবাবদিহিতার অভাব স্পষ্ট।
ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। এরপরই রয়েছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড।
৩৪৫টি ঘৃণাত্মক বক্তব্যের মধ্যে ১৭৮টি বক্তব্য বিজেপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও কিছু মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেও এসেছে। বিস্ময়করভাবে, দুইজন বিচারক ও একজন রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও সংখ্যালঘু মুসলিমদের টার্গেট করে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদনে নির্বাচন ও প্রচারপর্বে ঘৃণার প্রসার ও সহিংসতা বৃদ্ধির মধ্যে একটি পরিষ্কার সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। ৩২টি ঘটনায় শিশুদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং মুসলিম বয়োজ্যেষ্ঠদের ওপর সহিংসতার ঘটনাও উল্লেখ করা হয়। গোমাংসের গুজবকে কেন্দ্র করে গণপিটুনি, ধর্মীয় উৎসব চলাকালে হামলা ও হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর বিদ্বেষমূলক ক্যাম্পেইনগুলো নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে।
আরও উদ্বেগের বিষয়, প্রতিবেদন অনুসারে মাত্র ১৩% ঘৃণাজনিত হামলা পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ (FIR) আকারে নথিভুক্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনটি উপসংহারে বলেছে, ভারতীয় মুসলিমদের অবনতিশীল পরিস্থিতির মূল কারণ হলো রাষ্ট্রীয় বিচার ও সুরক্ষা ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতা। দিন দিন বাড়তে থাকা এই ঘৃণাজনিত হামলা শুধু ব্যক্তি নয়, তাদের পরিবার, সম্প্রদায় ও শেষ পর্যন্ত গোটা জাতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন