KOFIPOST

KOFIPOST

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস

১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর

মোঃ মাসুদ রানা
অ+
অ-
১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর

প্রশ্ন:

১৯৭২ সালের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধানে কী ধরনের মৌলিক অধিকারের বিধান রাখা হয়েছিল তা বিশ্লেষণ কর।


উত্তর:


ভূমিকা:

মৌলিক অধিকার হলো মানুষের জন্মগত অধিকার, যা তার ব্যক্তিস্বাধীনতা, মর্যাদা ও মানবিক বিকাশ নিশ্চিত করে। রাষ্ট্র সংবিধানের মাধ্যমে এসব অধিকারের সুরক্ষা দেয় এবং আইনের বাইরে এসব অধিকার খর্ব করা যায় না, যদি না তা জরুরি অবস্থার মতো ব্যতিক্রম পরিস্থিতি হয়।


বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তৃতীয় ভাগে (২৭ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত) সন্নিবেশিত করা হয়েছে।


১৯৭২ সালের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহঃ

১. আইনের দৃষ্টিতে সমতা (অনুচ্ছেদ ২৭):

সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। কারো সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না।


২. বৈষম্য নিষেধ (অনুচ্ছেদ ২৮):

ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কাউকে বৈষম্যের শিকার করা যাবে না। তবে নারী, শিশু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।


৩. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও জীবনের অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩১-৩২):

আইন অনুযায়ী ছাড়া কাউকে তার জীবন বা স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে এটি একটি প্রধান সুরক্ষা।


. গ্রেফতার ও আটক সংক্রান্ত অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩৩):

গ্রেফতারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে এবং আইনজীবীর সহায়তা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।


৫. বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৩৯):

নাগরিকরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে, তবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শালীনতা, বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।


৬. সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৩৭-৩৮):

শান্তিপূর্ণভাবে সভা, মিছিল ও সংগঠন করার অধিকার সকল নাগরিকের থাকবে। তবে জনস্বার্থে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপযোগ্য।


৭. ধর্মীয় স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৪১):

প্রত্যেক নাগরিক নিজের পছন্দমতো ধর্ম পালন, প্রচার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অধিকার রাখে।


৮. চলাফেরার স্বাধীনতা (অনুচ্ছেদ ৩৬):

বাংলাদেশের ভেতরে যেকোনো স্থানে চলাফেরা ও বসবাসের অধিকার রয়েছে। তবে জনস্বার্থে কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপযোগ্য।


৯. চাকরি ও পেশা নির্বাচনের অধিকার (অনুচ্ছেদ ২৯-৪০):

সকল নাগরিকের প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে সমান সুযোগ থাকবে। যোগ্য নাগরিকরা আইনগতভাবে যেকোনো পেশা বা ব্যবসা গ্রহণ করতে পারবে।


১০. সম্পত্তির অধিকার (অনুচ্ছেদ ৪২):

প্রত্যেক নাগরিক আইনের আওতায় সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও ব্যবহার করতে পারবে।


১১. বিচার সংক্রান্ত অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩৫):

প্রত্যেক অভিযুক্ত ব্যক্তি ন্যায়বিচার, নিরপেক্ষ আদালত এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার ভোগ করবে। কাউকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।


১২. সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার (অনুচ্ছেদ ৪৪):

যেকোনো নাগরিক মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করতে পারে। সংবিধানবিরোধী কোনো আইন কার্যকর হবে না।


উপসংহার:

বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো জনগণের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করে। যদিও এই অধিকারের প্রয়োগে কিছু বিধিনিষেধ আছে, তবুও এসব অধিকার জনগণকে রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। মৌলিক অধিকার শুধু আইনি সুরক্ষা নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার ও মানবিকতার মাপকাঠি।

ট্যাগস:

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসডিগ্রিডিগ্রি সাজেশনসংবিধান

কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।

© কফিপোস্ট ডট কম

অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন