‘আবরার হত্যাকাণ্ড জাতিকে স্তব্ধ করেছিল, সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হবেই’: প্রধান উপদেষ্টা


আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আবরারের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আশ্বাস দেন।
সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন শহিদ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ও মামা মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় নির্মমভাবে নিহত হওয়া আবরারের পরিবারের এই সাক্ষাৎ ছিল আবেগঘন, সংবেদনশীল এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় আবরারের বাবা বলেন, “আমার ছেলে দেশের স্বার্থে কথা বলেছিল। সে অসম চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু সেই জন্যই তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
তিনি জানান, আবরারের মা এখনও প্রতিদিন কাঁদেন। “এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, আর কোনো সন্তান যেন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার না হয়,”—এই আকুতিও জানান বরকত উল্লাহ।
আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছি। বিচারপ্রক্রিয়ায় যেন আর কোনো ধীরগতি না থাকে।”
আবরারের পরিবারের পক্ষ থেকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ জানানো হয়—আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগে ও পরে সংঘটিত সকল সহিংস হামলায় নিহতদের তালিকা তৈরি করে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি।
সাক্ষাতে কুষ্টিয়ার একটি জনদুর্ভোগের কথাও তুলে ধরেন মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ। তিনি জানান, গড়াই নদীর ওপর একটি সেতু না থাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন। সেতু নির্মাণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন তিনি।
আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের অভাব নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থী বান্ধব হয়ে উঠেনি। ল্যাব, সরঞ্জাম, আবাসনসহ নানা প্রয়োজনীয় বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে। আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এগুলোর উন্নয়নে আন্তরিক উদ্যোগ নেবে।”
তিনি বিশেষভাবে বুয়েটের র্যাগিং সংস্কৃতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। ফাইয়াজ বলেন, “আবরারের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আগেও এমন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। শুধু বর্তমান নয়, অতীতের ঘটনাগুলোরও বিচার হওয়া উচিত।”
আবরার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটি একটি হৃদয়বিদারক ও নৃশংস ঘটনা, যা পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করবই।”
তিনি আরও বলেন, “চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগে আওয়ামী লীগ ও তার সংগঠনের দলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত হবে। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে যারা হত্যা করেছে, সেসব ঘটনাও তদন্তাধীন রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”
তিনি আশ্বস্ত করেন, দেশের স্বার্থে কথা বলায় কেউ যেন প্রাণ হারায় না—সেই নীতিতে অটল থাকবে সরকার। অন্যায়ের বিচার হবে এবং বিচার যাতে দীর্ঘসূত্রতায় না পড়ে, সেজন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কফিপোস্টের সর্বশেষ খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল অনুসরণ করুন।
© কফিপোস্ট ডট কম
অনলাইনে পড়তে স্ক্যান করুন